জীবিকার তাগিদে মানুষ এক দেশ হতে অন্য দেশে পাড়ি দেয়। এই স্বপ্ন-দৌড়ে অনেকে জিতে আবার অনেকে বরণ করে করুন পরিণতি। কারণ সাধারণ মানুষের অজ্ঞতার সুযোগ গ্রহণ করে মানব পাচারকারী চক্র। আর অজ্ঞতার অন্যতম কারন হলো বিদেশ যেতে হলে, বিশেষ করে কাজের জন্য বা চাকরির জন্য, কি কি করতে হয়, কি কাগজপত্র লাগে, কোথায় তা যাচাই করতে হয় সে সম্পর্কে অনেকেরই জানা থাকে না। তাই বিদেশ যারা কাজের জন্য যেতে চান তাদের জন্য কতিপয় বিষয় জেনে রাখা উচিৎ।
১. চাকরির চুক্তিপত্র ও শর্ত: বৈধভাবে বিদেশ যেতে হলে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান চাকরি করার বেশ কিছু শর্ত বা নিয়ম-কানুনসহ চুক্তিপত্র দিয়ে থাকে। এটি অধিকাংশ ক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষায় এবং আরবী ভাষায় হয়ে থাকে। ফলে অনেক বিদেশগামী এগুলোর অর্থ ঠিকমতো বুঝতে পারেন না। ফলে সেখানে গিয়ে শর্তাবলী নিয়ে বিপদে পড়তে হতে হয়। চাকুরীর চুক্তিপত্র ও শর্তের অর্থ বুঝতে পারে এমন বিশ্বস্ত কাউকে দিয়ে পড়িয়ে ভালো করে বুঝে নিয়ে তারপর চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করতে হবে। না বুঝে না জেনে চাকুরীর শর্তে স্বাক্ষর করলে অনেক সমস্যা হতে পারে। যেমন- এক কাজের কথা বলে চাকুরীর শর্তে অন্য কাজের কথা লিখা থাকতে পারে। এক্ষেত্রে প্রতারিত হলে আইনী প্রতিকার পাওয়া যায় না।
২. ওয়ার্ক পারমিট: বৈধভাবে বিদেশে কাজ করতে হলে ওয়ার্ক পারমিট বা কাজের অনুমতি পত্র প্রয়োজন। যে দেশে কাজের জন্য যাওয়া হচ্ছে সেই দেশের নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে এটি দিয়ে থাকে। রিক্রুটিং প্রতিষ্ঠান থেকে যে ওয়ার্ক পারমিট দেওয়া হয়েছে তা সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাস বা বিএমইটি থেকে ওয়ার্ক পারমিটের সত্যতা পরীক্ষা করে নিতে হবে। ওয়ার্ক পারমিট সঠিক না থাকলে কোন দেশে গিয়ে বৈধভাবে কাজ করা যায় না।
৩. ভিসা : ভিসা হচ্ছে কোনো দেশে একটি নির্দ্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত থাকার একটি অনুমতি পত্র। এটি সাধারণত পাসপোর্টের শেষ দিকের পাতায় লাগানো থাকে। যে দেশে যাবেন সেই দেশের সংশ্লিষ্ট দূতাবাস থেকে কিংবা বিএমইটি থেকে ভিসা’র সত্যতা পরীক্ষা করে নিতে হবে। ভিসা সঠিক না থাকলে বিমান বন্দর থেকে ফেরত পাঠিয়ে দিতে পারে।
৪. বিএমইটি’র ডাটাবেজে নাম অর্ন্তভূক্তিকরণ : বিএমইটি’র ডাটাবেজে নাম অন্তর্ভূক্তি করা না হলে অভিবাসনের যে কোন পর্যায়ে যে কোন সমস্যা বা প্রতারণার শিকার হতে পারেন। যেমন ছাড়পত্র না পাওয়া, বিমানবন্দর থেকে ফেরত, দূর্ঘটনা জনিত ক্ষতিপূরণ না পাওয়া। সর্বোপরি যে কোন রকম প্রতারণার ক্ষেত্রে কোন অভিযোগ দায়ের করতে পারবেন না। আবার অভিযোগ গ্রহণ করলেও বিএমইটি শক্ত অবস্থান থেকে সহযোগিতা করতে পারবে না। (Bureau of Manpower , Employment and Training-BMET)
৫. বিএমইটি’র বহির্গমন ছাড়পত্র : মনে রাখতে হবে যে, এই ছাড়পত্র ছাড়া বৈধ অভিবাসন সম্ভব নয়। এটি সেখান থেকে নিতে হবে।
৬. ব্যাংক একাউন্ট খোলা : বৈধভাবে টাকা না পাঠালে আপনি আইনের চোখে অপরাধী শুধু হবেন না, আপনাকে কারাদন্ড ভোগ করতে হতে পারে কিংবা সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হতে পারে। তাই প্রয়োজনে সেই দেশে এবং এদেশে একটি ব্যাংক একাউন্ট খুলতে হবে এবং সকল রেমিট্যান্স এর মাধ্যমে পাঠাতে হবে।
৭. মেডিকেল পরীক্ষার সনদ : যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান থেকে মেডিকেল পরীক্ষার সনদ গ্রহণ করতে হবে। এটি না হলে উক্ত ছাড়পত্রগুলো পাওয়া যায় না।
মনে রাখবেন, যে কোনো আর্থিক লেনদেন রেজিষ্ট্রেশন নং এবং ফোন নং যুক্ত রশিদের মাধ্যমে করতে হবে। অন্যথায় প্রতারিত হলে অভিযোগ করার কোন বৈধ উপায় থাকবে না। বিদেশ যাওয়ার পর সেখানে যে কোন প্রকার অসুবিধা হলে তার প্রতিকারের জন্য দূতাবাসে কিভাবে যোগাযোগ করতে হবে তা অভিবাসনের পূর্বেই ভালোভাবে জেনে নিতে হবে এবং সেখানে দূতাবাসের ঠিকানা নিয়ে যেতে হবে।