বাল্যবিবাহ অতি প্রাচীন একটি সামাজিক প্রথা। সে সময় মেয়ে শিশুর বয়স দশের গন্ডি না পেরুতেই বিয়ে হতো। ছেলেদেরও খুব অল্প বয়সে বিয়ে হতো। বর্তমান সময়েও এটি বিদ্যমান। সেকালে শিক্ষা, বিজ্ঞান ও গবেষণা উন্নত ছিলো না বিধায় বাল্যবিবাহের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে তেমন গবেষণালব্ধ তথ্য ছিলো না। আর সাধারণ মানুষও এ নিয়ে মাথা ঘামাতো না। এই কারণে বাল্যবিবাহের ক্ষতিকর দিক নিয়ে তেমন কোনো আলোচনাও হতো না। বাল্যবিবাহ নিয়ে আমাদের সমাজে বেশ কিছু ধর্মীয় ও সামাজিক কুসংস্কার রয়েছে। যেমনঃ তাড়াতাড়ি মেয়ের বিয়ে না দিলে মেয়ে বিপথে যাবে, দেরিতে মেয়ের বিয়ে দিলে কেউ বিয়ে করবে না, দেরিতে বিয়ে দিলে বেশি যৌতুক লাগে ইত্যাদি। বাল্যবিবাহ যে শুধু মেয়ে শিশুর হয় তা নয়, বরং ছেলে শিশুরও অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে থাকে।
২০-২৪ বছর বয়সী মেয়েদের নিয়ে এক গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রায় ৩৩ শতাংশ মেয়ের ১৫ বছরের পূর্বে এবং ৬৬ শতাংশ মেয়ের ১৮ বছরের পূর্বেই বিয়ে হচ্ছে। বাংলাদেশে বাল্যবিবাহের ফলে প্রায় ৭৫.৭ শতাংশ মেয়ের শিক্ষা জীবন সমাপ্ত হয় না যা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়ার অন্যতম প্রধান কারণ। এছাড়া ইউনিসেফ এর বিশ্ব শিশু প্রতিবেদন ২০১৩ অনুযায়ী বিশ্বে বাল্যবিবাহে বাংলাদেশ অবস্থান ৪র্থ। সেখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ৬৬% মেয়ে ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার পূর্বে বিয়ে হয়। ভারতে এই হার ৪৭ শতাংশ।
১৯২৯ সালে প্রণীত বাল্যবিবাহ নিয়ন্ত্রণ/নিরোধ আইন অনুযায়ী বিয়ের ক্ষেত্রে মেয়ের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হতে হবে এবং ছেলের বয়স ২১ বছর পূর্ণ হতে হবে। এর পূর্বে বিয়ে হওয়া বাল্যবিবাহ বা শিশুবিবাহ হিসেবে গণ্য হবে। ১৯২৯ সালে প্রণীত বাল্যবিবাহ নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী বাল্যবিবাহ নিষিদ্ধ এবং দন্ডনীয়। বিবাহ রেজিস্ট্রেশনের পূর্বে জন্ম নিবন্ধন সনদ কিংবা জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদর্শন আইনত বাধ্যতামূলক। বাল্যবিবাহের ফলে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র প্রত্যেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই বাল্যবিবাহ বন্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা প্রয়োজন।
