চাকরির আবেদনের পর ইন্টারভিউয়ের জন্য কল পাওয়া এখন বেশ সৌভাগ্যের বিষয়। আর ভালোভাবে ইন্টারভিউ ফেস করে চাকরি নামের সোনার হরিণটি পেলেতো কোনো কথাই নেই। এই সোনার হরিণটি অনেক সময় হাতের কাছে আসলেও অনেকে তা হাত ছাড়া করে দেন শুধুমাত্র ইন্টারভিউ-এ কয়েক মিনিটে। তাই জেনে রাখা প্রয়োজন চাকরির ইন্টারভিউয়ের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি টিপস।
১. ইন্টারভিউ-এর নির্দ্দিষ্ট সময়ে উপস্থিত হবার চেষ্টা করুন। নিদিষ্ট সময়ের খুব আগে কিংবা খুব পরে উপস্থিত হবেন না।
২. আপনার মোবাইল সঙ্গে থাকলে তা সেই সময় বন্ধ কিংবা একান্ত প্রয়োজন হলে তা সাইলেন্স করে রাখুন।
৩. যথাযথ শব্দ, বাক্য কিংবা ভাষা ব্যবহার করে কথা বলুন। কথায় আঞ্চলিকতা সম্পূর্ণরূপে পরিহার করুন। ইন্টারভিউ-এ বেশি কথা বলা থেকে বিরত থাকুন।
৪. মনোযোগ দিয়ে প্রশ্ন শুনুন এবং উত্তর জানা থাকলে প্রাসঙ্গিক উত্তর বলুন। উত্তর না জানা থাকলে বলুন, দুঃখিত, এ বিষয়ে আমার জানা নেই কিংবা বলতে পারেন এই মুহুর্তে আমি বলতে পারছি।
৫. আপনার প্রতি আপনার নিজের যে আস্থা বা কনফিডেন্স আছে তা কথার মাধ্যমে তুলে ধরুন এবং যা বলছেন আস্থার সাথে কথা বলুন।
৬. নন ভারবাল আচরণ তথা কোনো কিছু বুঝানোর জন্য হাত নাড়ানো, আই কন্ট্যাক্ট এবং প্রয়োজনে হ্যান্ডসেক করুন। এগুলো দিয়ে আপনার ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তুলুন। হাঁচি-কাশি আসলে স্বাভাবিক নিয়মে তা মোকাবেলা করুন এবং পরিস্থিতির জন্য দুখিতঃ বলুন। উপরের দিকে তাকিয়ে কোনো কিছু মনে করার চেষ্টা করা থেকে বিরত থাকুন।
৭. চেয়ারে স্বাভাবিকভাবে বসুন। খুব বেশি হাত-পা নড়াচড়া করবেন না বিশেষ করে অযথা পা নড়াবেন না।
৮. পোশাক ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তোলে। তাই আপনি ইন্টারভিউ বোর্ডে খুব আধুনিক, ফ্যাশান্যাবল কিংবা খুব সেকেল পোশাক পরবেন না। যে পোষাক পরে আপনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না তা পরা থেকে বিরত থাকুন। আবার ঋতু বুঝে পোষাক পরিধান করুন।
৯. ইন্টারভিউ বোর্ডে আপনার কেউ পরিচিত থাকে তাহলে তার সাথে অন্যের মতোই স্বাভাবিক আচরণ করুন।
১০. চাকরি পেলে আপনি নিদিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত করবেন? এমন প্রশ্ন করলে চাকরিটি যে আপনি পূর্ণ সময় করবেন তা নিশ্চিত করুন।
১১. চাকরির ইন্টারভিউ এর পূর্বে পদ, দায়িত্ব, কার্যাবলী এবং চাকরি দাতা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ভালো ভাবে জেনে নিন। চাকরির বিজ্ঞাপন কিংবা ওয়েব সাইট থেকে তা সংগ্রহ করতে পারেন।
১২. ইন্টারভিউ বোর্ডে নার্ভাস হবেন না। মনে রাখবেন যারা ইন্টারভিউ বোর্ডে রয়েছেন তারাও সব জান্তা নন। আবার তাদের খাটো করেও দেখবেন না। তাদের স্বাভাবিকভাবে নিন। চাকরিটি যে আপনার খুবই দরকার এমনটি বেশি মনে করবেন না। আবার আপনি কিছুই জানেন না বা পারেন না সেটিও মনে করবেন না। কারণ এতে আপনার নার্ভাসনেস আরো বাড়াতে পারে। কোনো চাকরিতে ইন্টারভিউ এর ডাক পেলে তা গ্রহণ করুন এবং অংশগ্রহণ করুন। এতে আপনার ভীতি কমবে এবং কনফিডেন্স বাড়বে।
১৩. ইন্টারভিউয়ের সময় আপনাকে সবার সাথে কিছুটা হাসিমুখে কথা বলতে হবে বা উত্তর দিতে হবে যেন আপনাকে স্বাভবিক এবং ফ্রেন্ডলি মনে হয়।
১৪. যেসব তথ্য জীবন বৃত্তান্তে আপনি দিয়েছিলেন সেই জীবন বৃত্তান্ত বা সিভির একটি কপি রাখুন। এছাড়া পাসর্পোট সাইজের ছবি, সনদপত্র এবং অন্যান্য কাগজপত্রের মূল এবং ফটোকপি সাথে রাখুন।
১৫. আপনি প্রথমে নিজেকে মূল্যায়ন করুন এবং আপনার সবল এবং দূর্বল দিক সম্পর্কে আপনি ভালো ভাবে জেনে নিন। ইন্টারভিউ বোর্ডে যদি জানতে চাই আপনার ৩টি সবল ও ৩টি দূর্বল দিক তাহলে তা উল্লেখ করুন। দূর্বল দিকটি কৌশলে বলার চেষ্টা করতে হবে যেন তা খুব নেগেটিভ ভাব প্রকাশ না করে। তবে এমন কোনো দূর্বল দিক প্রকাশ করবেন না যাতে আপনার চাকরিটি না হয়। চাকরিটি পেলে আপনি অবশ্যই সেই দূর্বল দিকটি কাটিয়ে উঠার জন্য চেষ্টা করুন।
১৬. আপনাকে যে কোনো স্থালে পোস্টিং দিতে চাইলে কিংবা বদলি হতে পারেন বললে আপনি পূর্ণ সমর্থন দিন। ইন্টারভিউ বোর্ডে আপনাকে অনেক বিষয়েই পজিটিভ বা ইতিবাচক হতে হবে।
১৭. আপনার দক্ষতা ও যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরির জন্য আবেদন করুন। যে চাকরি আপনি করবেন সেই চাকরির জন্য আবেদন করুন। অযথা যে কোনো পোস্টের জন্য আবেদন করবেন না।
১৮. গুরুতর কোনো কারণ ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরি প্রত্যাখান করবেন না।
১৯. প্রারম্ভিক প্রশ্ন হিসেবে কম-বেশি সব ইন্টারভিউ বোর্ডে প্রশ্নকর্তা আপনাকে আপনার সম্পর্কে কিছু বলতে বলবে। ইন্টারভিউ বোর্ডে প্রশ্নকর্তা আপনার সম্পর্কে বলতে বললে আপনি কী বলবেন তা কয়েকটি বাক্যে আগেই ঠিক করে রাখুন।
২০. বেতন যদি আলোচনা সাপেক্ষে হয়ে থাকে তাহলে তা নিয়ে বেশি দর কষা-কষি করবেন না। আপনাকে যে বেতন অফার করা হবে তার থেকে খুব বেশি চাইবেন না। সম্ভব হলে সেটিতেই রাজি হওয়া উত্তম যদি তা আপনার বর্তমান বেতন থেকে কম না হয়। আপনি আপনার যোগ্যতা, দক্ষতা, বর্তমান বেতন এবং চাকরির প্রয়োজনীয়তা ভেবে বেতনের বিষয়ে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিন।
২১. চাকরি দাতা প্রতিষ্ঠানে আপনার কোনো আতœীয় চাকরি করেন কি- ইন্টারভিউ বোর্ডে এমন প্রশ্ন জানতে চাই তা হলে না বলুন। কারণ আতœীয়তার সম্পর্ক থাকলে অনেক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেই না। পারলে প্রথমে সেই চাকরিতে আবেদন করা থেকে বিরত থাকুন।
২২. আপনার কর্মজীবনে বা অন্য চাকরির কোনো অভিজ্ঞতা থাকে তাহলে সেই চাকরিতে আপনার পদ, কার্যাবলী সম্পর্কে জানতে চাইলে ভালোভাবে সংক্ষেপে তা তুলে ধরুন।
২৩. ইন্টারভিউ শেষ হলে আপনাকে যদি প্রশ্ন করে আপনার কোনো প্রশ্ন আছে? যদি থাকে তবে বলুন । না থাকলে যেতে বললে আপনি ধন্যবাদ কিংবা সালাম দিয়ে বেরিয়ে আসুন।
আপনার শিক্ষা, অভিজ্ঞতা, দক্ষতা, যোগ্যতা ইত্যাদি অনুযায়ী আপনাকে ইন্টারভিউ দিতে হবে এবং ভালোভাবে তা মোকাবেলা করতে হবে। মনে রাখা প্রয়োজন, ভালো ইন্টারভিউ ফেস করলেই যে চাকরি হবে তা নিশ্চত নয়, বরং চাকরির লিখিত পরীক্ষা, আপনার প্রাসঙ্গিক শিক্ষা, অভিজ্ঞতা, দক্ষতা আপনার চাকরি পাওয়ার জন্য গুরুত্বপর্ণ কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তবে ইন্টারভিউ ভালো হলে লিখিত পরীক্ষা কিছুটা খারাপ হলে চাকরি হতে পারে। কিন্তু ইন্টারভিউ খারাপ হলে লিখিত পরীক্ষা ভালো হলে চাকরি পাওয়া বেশ কঠিন হয়ে পড়ে।
